ছবি: অনলাইন থেকে সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দ্রুতই সাড়া ফেলে এই ছবি। পরের তিন দশকে হয়ে ওঠে সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাকশন
সিনেমা। ১৯৮৯ সালে ‘দ্য কিলার’ মুক্তির পর হংকং ছিল নিরুত্তাপ। ৩৫ বছর পর নিজেই নিজের সিনেমাটির রিমেক
করেছেন জন উ। গত ২৩ আগস্ট স্ট্রিমিং সার্ভিস পিককে মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য কিলার’। কেমন হলো রিমেক? জন উ-
জাদু কি আগের মতোই আছে নাকি ফিকে হয়ে আসছে?
হংকংয়ের নির্মাতা জন উকে যে অ্যাকশন সিনেমার ওস্তাদ মানা হয়, তা সিনেমাপ্রেমীরা সবাই জানেন। তাঁর সিনেমাকে
বলা হয় ‘বুলেট ব্যালে’। তবে ধুন্ধুমার অ্যাকশনের সঙ্গে আবেগের উপস্থিতি উকে আলাদা করেছে। অ্যাকশন
দৃশ্যগুলো যেন আলাদা করে গল্প বলে, প্রতিটি অ্যাকশনে নতুন স্টাইল, স্লো মোশনের ব্যবহার জন উকে নিয়ে গেছে
অন্য অস্ত্র, লড়াই আর রক্তই যেন তাঁর সিনেমার শেষ কথা।
১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া ফরাসি সিনেমা ‘লে সামুরাই’ এবং ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া মার্কিন সিনেমা ‘মিন স্ট্রিটস’
থেকে প্রেরণা নিয়ে ‘দ্য কিলার’ বানান উ। পরে তিনি জানান, ‘দ্য কিলার’ মূলত ওই দুই সিনেমার নির্মাতা জঁ-পিয়ের
মেলভিল ও মার্টিন স্করসেজির প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য। ১৯৮৬ সালে ‘আ বেটার টুমরো’র তিন বছর পর ‘দ্য কিলার’
নিয়ে হাজির হন জন উ। জং নামের এক আততায়ীকে নিয়ে গল্প। এক অভিযানে তার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারায় এক
গায়িকা। জংকে বিষয়টি প্রবলভাবে নাড়া দেয়। সে ঠিক করে, ওই গায়িকার দৃষ্টি ফেরাতে অস্ত্রোপচার করাবে। খরচ
জোগাতে শেষ অ্যাসাইনমেন্টে নামে জং।
গত ৩৫ বছরে সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাকশন সিনেমা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে দ্য কিলার। কোয়েন্টিন
টারান্টিনো, রবার্ট রদ্রিগেজ, জনি টোর মতো নির্মাতার অন্যতম প্রেরণা এ সিনেমা। শুধু তাঁরাই নন, অনেক
নির্মাতার সিনেমাতেই ‘দ্য কিলার’-এর প্রবল প্রভাব লক্ষণীয়। বিশেষ করে ফরাসি নির্মাতা লুক বেসোঁ। তাঁর ‘লা ফাম
নিকিতা’, ‘লিওঁ’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বিষয়টি ভালোই জানেন।
যেসব সিনেমা হিপহপ সিনেমাকে পরিণত করে, এমন একটি তালিকা প্রকাশ করে মার্কিন সাময়িকী ভাইব। ২০০৫ সালে
প্রকাশিত সে তালিকার ২১ নম্বরে ছিল ‘দ্য কিলার’। কেবল সিনেমাই নয়, হিপহপ সংগীতেও ছবির প্রভাব রয়েছে।
২০২৪ সালে মুক্তি পেলেও সিনেমাটির ইংরেজি রিমেক নিয়ে কথা হচ্ছে অনেক দিন। সেই নব্বইয়ের দশকেই ছবিটির
হলিউডের রিমেক নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়। সিনেমায় রিচার্ড গিয়ার, ডেনজেল ওয়াশিংটনের অভিনয়ের কথা শোনা যায়।
২০০৭ সালে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য হলিউড রিপোর্টার জানায়, কোরীয়-মার্কিন নির্মাতা জন এইচ লি ‘দ্য কিলার’
বানাবেন। গল্পের প্রেক্ষাপট লস অ্যাঞ্জেলেসের চায়না টাউন, ছবিটিতে জং উ-সাংয়ের অভিনয় করার কথা ছিল।
কিন্তু ছবিটি আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৭ সালে ‘ম্যানহান্ট’ দিয়ে হলিউডে সিনেমা নির্মাণে ফেরেন জন উ, সঙ্গে শুরু হয় দ্য কিলার-এর রিমেকের
আলোচনা। ইউনিভার্সাল পিকচার ঘোষণা করে, লুপিতা নিওঙ্গকে নিয়ে ছবিটির করছে তারা।
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী শিডিউল জটিলতায় ছবিটি ছেড়ে দিয়েছেন। ২০১৯ সালে জানা যায়।
২০২২ সালে ঘোষণা আসে, পিককের জন্য ছবিটি বানাবেন উ। গত বছর চূড়ান্ত হয় মূল চরিত্রে দেখা যাবে ব্রিটিশ
অভিনেত্রী নাতালি ইমানুয়েলকে। পরে হলিউডের ধর্মঘটের কারণে ছবিটির কাজ পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ
দেখল ‘দ্য কিলার’।
মূল গল্পের ছাঁচ ঠিক রেখে ছবিতে বেশ কিছু বদল এনেছেন নির্মাতা। তবে বেশির ভাগ সমালোচকের মত, নতুন কিলার
ঠিক জমেনি। মূল সিনেমায় অ্যাকশন আর আবেগের যে মিশ্রণ ছিল, সেটা নতুন ছবিতে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
৫ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী আগে ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজিতে নজর কেড়েছেন, জন উর সঙ্গে কাজ
নিঃসন্দেহে তাঁর ক্যারিয়ারকে আরও এগিয়ে দেবে।চলতি বছরই মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর অভিনীত ফ্রান্সিস
ফোর্ড কপোলার ‘মেগালোপলিস’।
নতুন ‘কিলার’ পুরোনোটির মতো না জমলেও জেন চরিত্রে নাতালি, দুর্দান্ত আবহসংগীত, অ্যাকশন আর নস্টালজিয়ার
টানে ছবিটি একবার দেখাই যায়।
তথ্যসূত্র: অনলাইন থেকে সংগৃহীত