উপরের মাটি অপসারণের ফলে লক্ষ্মীপুরে ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে

উপরের মাটি অপসারণের ফলে লক্ষ্মীপুরে ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে

ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের ভোলাকোট ইউনিয়নে আবাদি জমির উর্বরতা নষ্ট করে ব্যাপক হারে ইট তৈরির জন্য
ফসলি জমি থেকে উপরের মাটি সংগ্রহের কাজ চলছে।

কৃষকদের অভিযোগ, ভোলাকোট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহমদ মানিক ও উপজেলা আওয়ামী লীগ
নেতা দুলাল পাটোয়ারী দরিদ্র কৃষকদের তাদের জমির উপরের মাটি ইটভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করতে
‘প্রণোদিত’ করছেন। তারা ভোলাকোট ইউনিয়নের তিনটি ফসলি জমির উপরের মাটি অপসারণে স্থানীয় প্রশাসন
ও পুলিশকে ম্যানেজ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এই বিবেকহীন কাজটি উপজেলায় মাটির ক্ষয় এবং ফসলের উৎপাদন হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। অফ-সিজনে,
মাটি কম দামে ক্রয় করা হয় এবং শুষ্ক মৌসুমে বেশি দামে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়, যা কারো কারো জন্য
লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়।
যাইহোক, এই অভ্যাসটি কেবল জমির উর্বরতার জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি অবৈধও, কারণ এটি কৃষকদের
জীবিকা এবং এলাকার খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

এছাড়া বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাছাড়া
উপরিভাগের মাটি কেটে কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করাও বেআইনি।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না
বলে জানান কৃষকরা। সম্প্রতি উপজেলার কৃষকরা জমি রক্ষায় মানববন্ধনও করেছেন।

গত চার বছরে ২০০ একর কৃষি জমিতে ২০০টির বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরে ৩০টি
পুকুর খনন করা হয়েছে। এসব পুকুরের মাটি ইট তৈরির জন্য পাশের ইটভাটায় স্থানান্তর করা হয় বলে জানান
তারা।

মাটি ব্যবসায়ীরা প্রথমে এক টুকরো জমি ক্রয় করে এবং উপরের মাটি ২০ থেকে ২৫ ফুট গভীরে কেটে পার্শ্ববর্তী
ফসলি জমি ধ্বংস করে যা পরবর্তীতে কাছাকাছি জমির মালিকদের কম দামে তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য
করে। ফলে ফসলি জমির সংখ্যা কমার পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের ফলে ফসলের ক্ষেতে
জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষকরা সম্প্রতি ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দিলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা
নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, “সব ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আমরা কৃষকরা বাঁচব কী করে? আমরা কি
খাব? প্রশাসনের লোকজন বদলালেও তাদের কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আরেক কৃষক শাহ আলম বলেন, “আমার ফসলি জমি পুকুরে ঘেরা হয়ে গেছে; পুকুরের কারণে নিজের জমিতেও
যেতে পারছি না। কিছু ফসল ইতিমধ্যে কাটার জন্য প্রস্তুত কিন্তু আমি কিভাবে সেগুলো কেটে বাজারে নিয়ে
যাব; নৌকায় করেও ফসল আনা সম্ভব নয়।
ভাদুর ও ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা, শাহারপাড়া, শাকতলা, সশেশপুর ও সিরুন্দি পাঁচটি গ্রামের শতাধিক
কৃষক যুগ যুগ ধরে কৃষিজমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের জমিও প্রায় এক বছর ধরে মাটি
ব্যবসায়ীদের হুমকির মুখে পড়েছিল।
এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দুলাল পাটোয়ারী বলেন, ‘সবাই মাটি কাটছে, আমরা কাটলে ভুল হবে কেন?

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ পাঠান বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত
নই। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা করমিন ইসলাম বলেন, গত মাসিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মাটি
অপসারণ রোধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তথ্যসূত্র: অনলাইন থেকে সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *