নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস ভারতকে ২৫ রানে হারিয়ে

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস ভারতকে ২৫ রানে হারিয়ে

ছবি: সংগৃহীত
লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছে নিউজিল্যান্ডেরই ‘১১ বনাম ১ জনের’ সেই লড়াইয়ে । ধবলধোলাই করেছে ভারতকে
২৫ রানে হারিয়ে। দ্বিতীয়বারের মতো ঘরের মাঠে ধবলধোলাই হলো ভারত নিজেদের ইতিহাসে। তবে সেটি ছিল দুই
ম্যাচের সিরিজ।এবারই প্রথম তিন ম্যাচের সিরিজে।
দাঁড়িয়ে ছিলেন ঋষভ পন্ত নিউজিল্যান্ড ও ইতিহাসের মধ্যে। প্রথম দল হিসেবে তিন বা তার চেয়ে বেশি ম্যাচের
সিরিজে ভারতের মাটিতে ভারতকে নিউজিল্যান্ড ধবলধোলাই করতে পারবে, নাকি পন্ত ভারতকে বাঁচিয়ে দেবেন,
আলোচনা চলছিল তা নিয়ে।

পন্ত আসলে কী করেছেন? তিনি যা করেছেন, এই মুহূর্তে দুনিয়ায় খুব কম ক্রিকেটারই আছেন, তা তাঁরা করতে পারেন।
মুম্বাই টেস্টে নিউজিল্যান্ড জিতেছে-এটা যেমন ঠিক, ভারতের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান পন্তও যে হারেননি, ঠিক
সেটাও। আজ মুম্বাইয়ের ‘মৃত্যুকূপ’-এ পন্ত যে ইনিংসটি খেলেছেন, সেটা বিবেচনা করলে আর যাই হোক, তাঁকে
পরাজিতদের দলে রাখা যায় না।
কোহলির মতো অভিজ্ঞ এক ব্যাটসম্যান তো টেস্ট ক্যারিয়ারেই প্রথম ঘরের মাঠে টানা দুই ইনিংসে এক অঙ্কের
ঘরে আউট হলেন। কিন্তু খেলাটা যখন সংখ্যার, পরিস্থিতি বোঝাতে পরিসংখ্যান টানতেই হয়। ১৪৭ রানের লক্ষ্য
নিয়ে খেলতে নেমে পন্ত যখন উইকেটে আসেন, ভারতের রান ৩ উইকেটে ১৮। হঠাৎ করেই স্কোরটা হয়ে যায় ৫
উইকেটে ২৯ রান। পন্ত উইকেটে আসার আগে ভারত হারায় রোহিত, কোহলি ও গিলের উইকেট। আর পন্ত আসার পর
দ্রুতই চলে যেতে দেখেন জয়সোয়াল ও সরফরাজকে।
এলবিডব্লু হয়েছিলেন প্যাটেলের বলে। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেননি। কিন্তু বাস্তবতা তো এটাই যে ভাগ্য সাহসীদের
সঙ্গেই থাকে! আর পন্ত তো এভাবেই খেলেন। তাঁর প্রথাগতের বাইরের সেই সব শট খেলার পর উইকেটকিপার বারবার
‘ক্যাচ ইট-ক্যাচ ইট’ বলে চিৎকার করবেন, ধারাভাষ্যকাররা অবাক হবেন, আরও কত কী! মানে প্রতিটি ইনিংসই
বিশ্লেষকদের জন্য নতুন নতুন চিন্তার খোরাক নিয়ে হাজির হয়। সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে হয়ে থাকে
আলোচনার বিষয়। ভাগ্যও সঙ্গ দিয়েছে পন্তকে
৫৭ বলে ৬৪ রান নিয়ে পন্ত যখন আউট হন, নিউজিল্যান্ড তখনই বিশেষ কিছুরই ইঙ্গিত পেয়েছিল। পন্তের আউট
নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে নিজের স্টাইলে ডিফেন্ড করতে চাইলে বল যায় কিপারের হাতে ।
মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। নিউজিল্যান্ড ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে তাদের হাতে থাকা শেষ রিভিউটাকে
মাঠের বড় পর্দায় যখন রিভিউ দেখানো হচ্ছিল, পন্ত আম্পায়ারকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করেন, হয়তো ব্যাট
প্যাডে লাগার বিষয়টিই। তৃতীয় আম্পায়ারের কথা শুনে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত বদল করে আঙুল তুলে জানান পন্ত
আউট! নিজের এই আউটে পন্তও খুশি ছিলেন না।
এবারের রিভিউতে অবশ্য জয়ী হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম ল্যাথাম। রিভিউতে দেখা যায় বল হালকা করে
ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গেছে উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেলের গ্লাভসে। একই সময়ে আবার ব্যাট লেগেছিল প্যাডে। তৃতীয়
আম্পায়ারকেও সিদ্ধান্ত দিতে বেশ সময় নিতে হয়েছিল সে কারণে।
মুম্বাই টেস্টে ১১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে নিলেন ৬ উইকেট। এই
টেস্টের আগে মুম্বাইয়ে খেলা সর্বশেষ টেস্টেও ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। এই সিরিজে উইকেট নিয়েছেন
১৫টি। অবিশ্বাস্য এই অর্জনে সবচেয়ে বড় অবদান এই ম্যাচের সেরা এজাজ প্যাটেল আর সিরিজের সেরা ব্যাটসম্যান
উইল ইয়াং।
অবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা নাড়তে নাড়তে ধীর পদক্ষেপে মাঠের বাইরে চলে যান পন্ত। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ের
গ্যালারিতে তখন পিনপতন নীরবতা। দৃশ্যটি দেখে যে কারওই মনে হবে-সব আশার সমাধি হয়ে গেছে! আসলেই যে
পন্তের বিদায় ভারতীয়দের মুম্বাই টেস্ট জয়ের সব আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল!
সেটার কারণ তো খেলার পরবর্তীই অংশেই রচিত হয়েছে। পন্তের আউটের সময় ভারতের প্রয়োজন ছিল আরও ৪০
রান, নিউজিল্যান্ডের ৩ উইকেট। ওয়াশিংটন সুন্দর চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু অমন উইকেটে কাজটা সহজ ছিল না।
শেষ পর্যন্ত তিনি পারেনওনি। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১২ রানে আউট হয়ে ফিরেছেন সুন্দর। ভারতের মাটিতে
দ্বিতীয়বারের মতো কোনো দল ১৫০ রানের কম সংগ্রহ ডিফেন্ড করে টেস্ট জিতল।

তথ্যসূত্র: প্রথম আলো থেকে সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *