ছবি: অনলাইন থেকে সংগৃহীত
ঘটনাটি ২৭ বছর আগের। দিনাজপুরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ইয়াসমিনের জীবন নিয়ে আমি ইয়াসমিন বলছি নামে সিনেমা
বানাচ্ছেন সুমন ধর, এমন একটা খবর গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ছাপা হয়। ‘অনন্যা, হাসনার পর ইয়াসমিন’
শিরোনামে খবরটি প্রকাশের দিনই পরিচালকের কাছে একটি নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন আসে। অপরিচিত নম্বর, তাই তিনি
ধরেননি। পরদিন আরেকটা নম্বর থেকে ফোন। দুইদিন পরই তাঁর একটি ওয়েব ফিল্মের শুটিং, তাই টেকনিশিয়ান ফোন করছেন ভেবে
ফোনটা ধরলেন সুমন।
১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে রাতে ঠাকুরগাঁওগামী বাসে দিনাজপুরের উদ্দেশে আসে ইয়াসমিন নামে এক কিশোরী।
বাসের স্টাফরা ভোররাতে তাকে দিনাজপুর-দশমাইল মোড়ে এক চায়ের দোকানদারের জিম্মায় দিয়ে সকাল হলে দিনাজপুরগামী বাসে
তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর কোতোয়ালি পুলিশের টহল পিকআপ আসে। বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে
জোর করে মেয়েটিকে পিকআপে তুলে নেয়। পথে কিশোরীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় মহাসড়কে। এ ঘটনা কেন্দ্র করে
সৃষ্ট দিনাজপুরবাসীর প্রতিবাদ আন্দোলনে ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট দিনাজপুর ছিল উত্তাল। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সাত
আন্দোলনকারী। আহত হন দুই শতাধিক। দিনাজপুরসহ সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
জানালেন, ‘কণ্ঠ শুনে বুঝলাম, জায়েদ (খান) ভাই। আগের দিনও তিনি ফোন করেছিলেন। ফোন করে জায়েদ ভাই আমাকে বললেন,
“আপনাকে আমার সঙ্গে একটু হারুন (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ) ভাইয়ের ওখানে যেতে
হবে। কেন যেন আপনাকে ডাকছেন। আমি যেহেতু চলচ্চিত্রের মানুষ, তাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ” পরদিন আমি গেলাম, কয়েক
মিনিটের ব্যবধানে জায়েদ ভাইও ঢুকলেন। দেখলাম, হারুন সাহেব তাঁর রুমে বসা। তাঁর টিমও আছে। সালাম দেওয়ার পর আমাকে
প্রশ্ন করলেন, “কী অবস্থা? শুনলাম, আপনি একটা সিনেমা করছেন, আমি ইয়াসমিন বলছি? ” বললাম, হ্যাঁ করছি। তিনি বললেন,
“এটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা আছে। এই ছবি আসলে করা যাবে না। আমাদের এখানে বড় বড় আরও শক্তিশালী গল্প আছে। ওগুলো
আপনাকে দিই, সেখান থেকে করেন। ”’
সুমন জানান, ‘বললাম, এই ছবির পেছনে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। সেই ২০১৭ সাল থেকে লেগে আছি। যেহেতু সত্যি গল্প,
সিনেমার মধ্যে যেন সবটুকু সঠিকভাবে উঠে আসে, তার জন্য অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। নিজেরও টাকা বিনিয়োগ আছে,
প্রযোজকেরও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ছবিটা বানাব বলেই ওই সময় নাটক বানানো কমিয়ে দিই। টুকটাক যে বিজ্ঞাপনচিত্র
বানাতাম, তা–ও বন্ধ করে দিই। ছবিটা না হলে অর্থনৈতিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। নাছোড়বান্দা হারুন ভাই এটুকু বললেন, এই
ছবি করা যাবে না। তিনি যে আমার সঙ্গে খুব রাগী গলায় কথা বলেছেন, তা নয়। এরপর তাঁর সহকারীকে ডেকে বললেন, “আমাদের
কাছে ভালো ভালো গল্প আছে, সেগুলো সুমনের সঙ্গে শেয়ার করেন। সুমন যেটা পছন্দ করবেন, সেটা করবেন। আর সুমনের যদি
স্পনসর প্রয়োজন হয়, আমরা জোগাড় করে দেব। ”সুমন ধরের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আমি ইয়াসমিন বলছির কেন্দ্রীয়
চরিত্রের অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গেও কথা বলতে চান সাবেক এই ডিবিপ্রধান। এ ঘটনার চার দিন আগে ছবিতে
চুক্তিবদ্ধ হন মিম।
শুধু সুমনকে না, মিমকেও ছবিটি থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন হারুন। মিমের কথায়, ‘হোয়াটসঅ্যাপে কল দেখে একটু ঘাবড়ে যাই।
তিনি (হারুন অর রশীদ) কেন আমাকে ফোন করবেন? ভাবতেও পারিনি যে আমার কাছে এমন একটি ফোনকল সেদিন আসবে আর বলা
হবে যে ছবিটিতে অভিনয় করতে পারব না। যখন তিনি বললেন, “তোমার পরিচালক আমার সামনে বসা, ” তখন বুঝতে বাকি থাকেনি যে
ছবিটা বোধ হয় আর হবে না। পরিচালক বের হওয়ার পর ফোন করে তা নিশ্চিত হই। সব মিলিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়। শিল্পীর জীবনে
চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ সব সময় আসে না। আসার পর যখন আবার তা থেকে বঞ্চিত হতে হয়, তখন মন খারাপ হয়।’
এদিকে নতুন খবর হচ্ছে হারুনের কারণে আটকে থাকা আমি ইয়াসমিন বলছি নামের ছবিটির কাজ ফের শুরু হচ্ছে। পরিবেশ অনুকূলে
এলেই জ্বালাবেন লাইট, ক্যামেরা।
তথ্যসূত্র: অনলাইন থেকে সংগৃহীত