ছবি: অনলাইন থেকে সংগৃহীত
তাকবির (আল্লাহু আকবার), তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাহমিদ
(আলহামদুলিল্লাহ) পাঠের কারণে আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে
নামাজ আদায় করছিলাম। লোকদের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল- ‘আল্লাহু আকবার কাবিরা,
ওয়ালহামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসিলা।’ অতঃপর রাসুল (সা.)
জিজ্ঞাসা করলেন, কে এই বাক্যগুলো বলেছে? লোকদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি বলেছি হে
আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম; ওইগুলোর জন্য আকাশের সব দরজা খুলে
দেওয়া হয়েছে।’ -সহিহ মুসলিম
কেয়ামতের দিন এগুলো মিজানের পাল্লায় অনেক ভারী হবে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বাহ!
বাহ! পাঁচটি জিনিস মিজানে কতই না ভারী! ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’, ‘সুবহানাল্লাহ’
ও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আর নেক সন্তান, যে মারা গেলে তার পিতামাতা তাতে সওয়াব কামনা করে।’ –
মুসনাদে আহমাদ
আল্লাহতায়ালা সুমহান, তার চেয়ে মহান আর কেউ নেই। ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলে অহংকার কেবলমাত্র
তারই; তার অহংকার এমন এক বিষয়, যার হাকিকত অনুধাবনে অথবা তা কল্পনায় বা ধরন বুঝতে
মানুষের জ্ঞান অপারগ। বস্তুত আল্লাহর বড়ত্বের বিষয়ে মানুষের হৃদয়ে যা ধারণার উদ্রেক হয়, তিনি
তার চেয়েও বড়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি কেয়ামতের দিন আসমানসমূহকে এক আঙুলে, ভূম-লকে এক
আঙুলে, গাছ-গাছালিকে এক আঙুলে, পানি ও কাদামাটি এক আঙুলে এবং অবশিষ্ট সৃষ্টিকে এক আঙুলে
উঠিয়ে নেবেন।’ -সহিহ বোখারি
মুমিন বান্দা সুমহান প্রভুর মাধ্যমে আত্মরক্ষা করে, তার ওপরই তাওয়াক্কুল করে ও সবকিছু তার
কাছে অর্পণ করে এবং কেবলমাত্র তার কাছেই দোয়া করে ও তার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ইরশাদ হয়েছে,
‘আর তারা আল্লাহকে যথোচিত সম্মান করেনি অথচ কেয়ামতের দিন সমস্ত জমিন থাকবে তার হাতের
মুঠিতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তার ডান হাতে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাদের
শরিক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে।’ -সুরা যুমার : ৬৭
বান্দাদের জন্য কোনো সুখ, কল্যাণ ও নেয়ামত নেই- তাদের রবকে চেনা, একমাত্র তাকেই তাদের
আকাক্সক্ষার লক্ষ্য স্থির করা এবং তাকে তাদের চোখের প্রশান্তি হিসেবে জানা ছাড়া। অহংকার
প্রভুত্বের একটি বৈশিষ্ট্য, তাই সৃষ্টিকুলের মধ্যে যে ব্যক্তি এ গুণ ধারণ করবে তাকে তিনি শাস্তির
হুমকি দিয়েছেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইজ্জত ও সম্মান আল্লাহর ভূষণ এবং অহংকার
তার চাদর। যে লোক এ ক্ষেত্রে আমার সঙ্গে টানাহেঁচড়া করবে আমি তাকে অবশ্যই সাজা দেব।’ -সহিহ
মুসলিম
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যেহেতু অহংকার বিশাল ও ব্যাপক, তাই এটি চাদর নামের অধিক
যোগ্য।’ সুতরাং মানুষ যেন পৃথিবীতে বড়াই করা, মানুষের প্রতি অহংকার, তাদের প্রতি দাম্ভিকতা
প্রদর্শন ও অত্যাচার করা থেকে সাবধান থাকে।
যাকে ক্ষমতা ও কর্র্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তার আত্মা স্বীয় স্ত্রী বা অন্যদের মতো দুর্বল
ব্যক্তির ওপর অত্যাচার করতে আহ্বান করে; সে যেন মনে রাখে আল্লাহ তার চেয়ে সত্তায়, শক্তিতে
ও ক্ষমতায় বড়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ
অন্বেষণ কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান।’ -সুরা আন-নিসা : ৩৪
যার দৃঢ় জ্ঞান আছে যে, আল্লাহ মহান; তার প্রতি তার ভয় বেড়ে যায়, সে তাকে শ্রদ্ধা করে, তাকে
ভালোবাসে এবং উত্তমভাবে তার ইবাদত-বন্দেগি পালন করে। আর তার অন্তর থেকে অহংকার, দম্ভ ও
কপটতা বেরিয়ে যায়। বস্তুত আল্লাহ তার বিনয়ী মুমিন বান্দাদের জন্য জান্নাত বানিয়েছেন। মহান
আল্লাহ বলেন, ‘এটা আখেরাতের সে আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা জমিনে উদ্ধত
হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকিদের জন্য।’ -সুরা আল কাসাস : ৮৩
তথ্যসূত্র: অনলাইন থেকে সংগ্রহীত