রমজান সংযমী হতে শিক্ষা দেয়

রমজান সংযমী হতে শিক্ষা দেয়


ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত

সংযম মানে বিরত থাকা, সংবরণ করা। সব ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড, অন্যায়, অবিচার থেকে বিরত থাকার
পাশাপাশি সব ধরনের বদ অভ্যাস থেকে নিবৃত্ত থাকার নামই হলো সংযম। তবে মনে রাখতে হবে সব ধরনের
খারাপ কাজ বা বদ অভ্যাস ত্যাগ করার নামই সংযম নয়। সংযম হলো আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সব আদেশ-
নিষেধ মেনে বা পালন করে আত্মিক শক্তির উন্নয়ন সাধন করা।

তাই রমজানে সংযমী হওয়া সব মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান শুরু হয় তখন
আসমানসমূহের দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে
শৃঙ্খলিত করা হয়। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৭৭৮)।

এ হাদিসে বলা হয়েছে- শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। তারপরও কি মানুষ শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত হয়? ১১ মাস
শয়তান আমাদের নফসে যে শয়তানি প্ররোচনা দিয়ে বিভ্রান্ত করে তার প্রভাব থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি না।
আমরা রোজার মাসে অসংযমী হয়ে উঠি। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ করেন। অধিক মুনাফা লাভের জন্য তারা এ কাজটি করেন। অথচ তা কখনোই কাম্য
নয়।
রমজান মাসের মূল ইবাদত হলো রোজা রাখা এবং পাশাপাশি বেশি বেশি নেক আমল করা। অথচ আমরা তা
কতটুকু সহিহ ও বিশুদ্ধভাবে করতে পারছি সেটাই ভাবার বিষয়।
রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো সংযমী হওয়া। তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। আচার-আচরণ, খাওয়া, চলাফেরা, কথা বলা,
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সবদিকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয় রমজান। সারা দিন ধরে উপবাস
করার মধ্যে রোজার মাহাত্ম্য নেই।
রোজা রাখার মাধ্যমে আমাদের আত্মার সংযমী অর্জন করতে হবে। আমাদের সব ধরনের রিপু থেকে সংযমী হতে
হবে। পবিত্র রমজান মাসে সংযম অবলম্বন করার মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমানের পারলৌকিক ও ইহলৌকিক সফলতা
নিহিত রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক উপকারিতা। তাই আমাদের উচিত অন্য মাসে আমরা যেসব কাজ (বদ
অভ্যাস, অপ্রয়োজনীয় কাজ) নিজেদের অভ্যাস অনুযায়ী পালন করি পবিত্র রমজান মাসে সেসব কাজ থেকে বিরত
থাকাই হলো সংযম।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, রোজা ব্যতীত মানুষের
প্রত্যেকটি আমল তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। রোজা ঢালস্বরূপ।
তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়। কেউ যদি তার
সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করতে আসে সে শুধু বলবে আমি একজন রোজাদার। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ১৭৮৩)
আমাদের দুর্ভাগ্য, রমজানে আমাদের দেশে সবাই যেন অসংযমী হয়ে উঠি। কী পণ্যের বাজার, কী সেবাদানকারী
প্রতিষ্ঠান। বেড়ে যায় ঈদ বকশিশের নামে ঘুষের মাত্রা। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা, গান শোনা, ঘুষ খাওয়া,
গিবত করা আমাদের ফ্যাশনের পর্যায়ে চলে গেছে। তার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের
মূল্য রোজার মাসে ব্যবসায়ী ভাইয়েরা বাড়িয়ে দেন। ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন নিম্নবিত্ত মানুষ। অথচ এটা একটা
গর্হিত কাজ। এরপর আছে উচ্চবিত্তের ইফতার পার্টির নামে অপচয়।
বিশ্বজুড়ে এখন অর্থনৈতিক মন্দা। এমন সময়ে আমরা রমজান উদযাপন করছি। আমাদের সবার উচিত যে
যেখান থেকে পারি মানুষের কল্যাণে সচেষ্ট হই। গরিব মিসকিন আর দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াই। তাদের খাদ্য
সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করি। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা তোমরা দান কর
সেদিন আসার পূর্বে যেদিন থাকবে না কোনো বেচাকেনা, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। ’ (সুরা

বাকারা, আয়াত ২৫৪)। রসুল (সা.) বলেছেন, রোজা ঢালস্বরূপ, তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন
মুখ দিয়ে অশ্লীল ও খারাপ কথা না বলে। কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করলে অথবা গালি দিলে সে যেন বলে, আমি
রোজাদার। ’ (বুখারি শরিফ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *