ছবি : ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত
পরিচয়ে ফেসবুক আইডি খুলে ডিভোর্সি ও সিঙ্গেল মাদার নারীদের টার্গেট করে সখ্য গড়ে তুলতেন নড়াইলের
বেনজির হোসেন (৪০)। নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
এ ছাড়া পাঁচ বছরে পুলিশ পরিচয়ে, সেনাবাহিনী ও পুলিশে চাকরির প্রলোভন, হুন্ডি ব্যবসা ও মানবপাচারের
মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি।
অবশেষে ২২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম
(সিটিটিসি) ইউনিটের কাছে গ্রেফতার হন। সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ খুলনার ফুলতলা
থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সোমবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি
প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বেনজির আমেরিকা প্রবাসী এক বিমান চালকের ফেসবুক
প্রোফাইল কপি করে একটি ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করেন।
প্রোফাইলটি বিশ্বাসযোগ্য করতে তিনি নিয়মিত বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন। তিনি
ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। বিয়ে ও সপরিবারে
আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে তিনি অডিও কলে কথা বললেও কখনোই ভিডিও কলে বলতেন না। অনলাইন প্রণয়ের
একপর্যায়ে তিনি বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা
নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৩টি নগদ অ্যাকাউন্টে গত ৪ মাসে ১ কোটি টাকারও
বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বেনজিরের বাড়ি নড়াইল হলেও টাকা তুলতেন যশোর ও খুলনার বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট
পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন অন্য ব্যক্তির নামে। ক্যাশ
আউট করার সময় বেনজির পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মাস্ক পরে থাকতেন।
প্রতারণার শিকার নারীদের বিষয়ে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, একজন সিঙ্গেল মাদার বেনজিরের প্রতারণার
শিকার হয়ে গত সাত মাসে বিভিন্ন নগদ নম্বরে প্রতি মাসে ১৪-১৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা
খুইয়েছেন। একই সময়ে অপর এক ভুক্তভোগী বেনজিরের কাছে খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
বেনজিরের স্মার্ট ফোনে পঞ্চাশের বেশি ভুক্তভোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। তার প্রতারণার শিকার হয়ে এক নারী
আত্মহত্যাও করেছেন। নারীদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবিও সংগ্রহ করতেন। অনেক ভুক্তভোগী সম্মান
হারানোর ভয়ে এসব প্রকাশ করতে চান না।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ-সম্পদ গড়ে তুলেছেন বেনজির। এ অর্থে
৫ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়ি বানিয়েছেন। এছাড়া ৩ বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল ভবন কিনেছেন।
নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় আনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ভবন, যশোর ও
সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবনসহ বিপুল ব্যাংক-ব্যালেন্সও রয়েছে তার।
অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, বেনজির এইচএসসি পাশ করে একটা চাকরিতে যোগ দেন। পরে
চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায়। তিনি খুবই নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। তার বাবা হাটবাজারে তালের শাঁস
বিক্রি করতেন। তবে বেনজির খুব মেধাবী ছিলেন। তার বৈধ কোনো পেশা নেই। তার মূল কাজই প্রতারণা
করা। এলাকার মানুষ তাকে সন্দেহ করলেও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় কিছুই বলতেন না।
বেনজির বিএনপির রাজনীতি করতেন বলেও দাবি করেন সিটিটিসি প্রধান
তথ্য সূত্র : অনলাইন থেকে সংগ্রহীত