শ্যামদেশে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের বাসিন্দারা

শ্যামদেশে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের বাসিন্দারা


ছবি: অনলাইন থেকে সংগৃহীত
সংঘাত, মৃত্যু, বাস্তুচ্যুতি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে মিয়ানমারে। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত
সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অপসারণ করে ক্ষমতা দখলে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে
একেবারেই শান্তি নেই দেশটিতে। জান্তা সরকারের নৃশংস হত্যার হাত থেকে বাঁচতে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে
পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাসিন্দারা। কেউ লুকাচ্ছেন গুহায়। কেউ বা ঘন জঙ্গলে। অনেকেই আবার ছাড়ছেন নিজ দেশ।
আশ্রয় নিচ্ছেন পরবাসে। চোরাপথে প্রতিবেশী চীন-ভারত থাইল্যান্ডে। বিশেষ করে থাইল্যান্ডে। প্রাণ বাঁচাতে
শ্যামদেশের (থাইল্যান্ডের প্রাচীন নাম) ‘মায়ে সোট’ শহরেও ঠাঁই নিয়েছেন হাজার হাজার বাসিন্দা। নিজেদের
মতো করে গড়ে তুলেছেন ছোটো এক নগরী। ঘর থেকে শুরু করে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, বিদ্যালয়, খাবারের দোকান,
হেয়ারড্রেসার, খামার এবং আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের মতো ব্যবসাও প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিনোদনের জন্য খেলাধুলা,
যোগব্যায়াম, শিল্প, সংগীতেরও ব্যবস্থাও গড়েছেন সেখানেই। মৃত্যুপুরী ছেড়ে নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে
পেয়েছেন শরণার্থীরা। 
মায়ে সোটেতে যারা আগে থেকেই আছেন, তারা সেখানে নতুন আসা শরণার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে
দেন। কয়েকজন উদ্বাস্তু সম্প্রদায়-ভিত্তিক সংস্থা (সিবিওএস) গঠন করেছে। যেখান থেকে বিনামূল্যে মাসিক খাদ্য
রেশন প্রদান করা হয়। অনেক শরণার্থী জিনিসপত্র ছাড়াই মায়ে সোটে আসেন। এজন্য কিছু সংস্থা ‘নিরাপদ ঘর’
স্থাপন করেছে। যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা হয়। অনেকেই বইয়ের দোকান ও লাইব্রেরি
খুলেছেন। একটি অনানুষ্ঠানিক উদ্বাস্তু বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এমনকি শরণার্থীদের একটি রেডিও
স্টেশনও রয়েছে। যেটি সপ্তাহে দুবার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। মায়ে সোট নিরাপদ স্থান হলেও শিশু এবং
প্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীদের অনেকেই ট্রমায় ভুগছেন। তবে সংগীত এবং নৃত্যের মতো ক্রিয়াকলাপের স্থানগুলো
তাদের মনস্তাত্তি¡ক সহায়তা দিয়ে থাকে। একজন বার্মিজ পেশাদার বেহালাবাদক সেখানে অর্কেস্ট্রা শুরু
করেছেন। কাছাকাছি থাই স্কুলে সংগীত শেখানোর কাজও করছেন। অজ্ঞাত নামের একজন শরণার্থী বলেন,
‘চ্যালেঞ্জ এবং কষ্টের মধ্য দিয়ে আমি নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে পেয়েছি।’
একজন বাসিন্দা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম। কিন্তু সামরিক বাহিনী আমাদের হত্যা করা
শুরু করে। যখন আমার পাশের বন্ধুকে হত্যা করে তখন আমি সেখান থেকে পালিয়ে মায়ে সোট চলে আসি। অন্য
আরেকজন মিয়ানমারের মান্দালয় শহরে কম্পিউটার শেখাতেন। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর রাস্তায় বিক্ষোভে যোগ
দিয়েছিলেন। সামরিক প্রশিক্ষণের পর তিনি পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ, বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন) গ্রুপের
সঙ্গে যোগ দেন। তার গ্রুপের বেশ কয়েকজন কমরেডকে হত্যা করার পর তিনিও ‘মায়ে সোট’ পালিয়ে আসেন। 

সেখানে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি নয়টি পরিবার থেকে ১৩ জন ছাত্র নিয়ে শুরু হয়েছিল।
এজন্য নাম দেওয়া হয় ‘নয়টি পরিবার’। যার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের দুটি
শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০০ তে উন্নীত হয়েছে।
একজন উদ্বাস্তু তাদের প্রতিশ্রুতির সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন : আমরা একসঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি।
আমাদের বোঝা ভাগাভাগি করি। আমাদের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা, ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে
আমাদের দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে একত্রে আবদ্ধ। উদ্বাস্তু উদ্যোগগুলো কোনো বাহ্যিক তহবিল ছাড়াই অনেক কিছু
অর্জন করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত।
তথ্যসূত্র: অনলাইন থেকে সংগ্রহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *