ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল রাজধানী। এ শহরে জনসংখ্যার অনুপাতে যতটা নাগরিক সেবা থাকা দরকার, তার
যথেষ্ট ঘাটতি আছে। বলা যায়, শহর হিসেবে বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে ঢাকা। বিষয়টিকে আরও বেশি ত্বরান্বিত
করছে অনুন্নত সড়ক ও সড়কে অব্যবস্থাপনা। সারা বছর এ শহরে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। দুর্ভোগ কমাতে
উন্নয়ন তো হতেই হবে, কিন্তু সেই উন্নয়নকাজ বরং আরও দুর্ভোগ বাড়িয়েই দিচ্ছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে মানা হয় না
কোনো নীতিমালা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
একই রাস্তা একবার খোঁড়ে সিটি করপোরেশন, আরেকবার খোঁড়ে ওয়াসা, এরপর খোঁড়ে বিদ্যুৎ বিতরণের সংস্থা।
খোঁড়াখুঁড়িতে কোনো লাগাম নেই। এ নিয়ে স্পষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা কেউ মানছে না। নীতিমালায় উল্লিখিত
নির্দেশনার কয়েকটি হলো কোনো একটি এলাকার একটি সড়কের পুরোটা একসঙ্গে খোঁড়া যাবে না। মাসের পর মাস
একটানা কোনো সড়ক খোঁড়া যাবে না। ১৫ দিনে ভাগ করে খননকাজ করতে হবে। ধুলাবালু উড়ে যাতে ভোগান্তি না হয়,
সে জন্য নিয়মিত পানি ছিটাতে হবে। সতর্কীকরণ ফিতা দিয়ে খনন এলাকা ঘিরে রাখতে হবে। চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে
মালামাল মজুত করে রাখা যাবে না। কিন্তু আদতে এসবের বেশির ভাগই মানা হয় না, মানা হলেও তা নামকাওয়াস্তে।
কোনো কোনো সড়ক চার-পাঁচ মাস আগে কাটাকাটি করা হয়েছে, যা এখনো মেরামত করা হয়নি।
সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি সড়ক খুঁড়তে চাইলে তা আগে করপোরেশনের আঞ্চলিক
নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। খননের অনুমতি দেওয়ায় গঠিত ওয়ানস্টপ সমন্বয় সেলের অনুমোদন নিয়ে
খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে। কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে সড়ক খুঁড়লে মূল ক্ষতির পাঁচ গুণ জরিমানা আদায়
করতে পারবে সিটি করপোরেশন। যদিও কাউকে জরিমানা করার ঘটনা জানা যায় না।
সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় সড়ক খননে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আনতে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘ঢাকা
মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি,
ডেসকো, বিটিসিএলের মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। তবে তা মানার ব্যাপারে উদ্যোগ
নেই।এখন নীতিমালাই যদি মানা না হয়, তা প্রণয়নের মানেটা কী? উন্নয়নকাজে সংস্থা ও কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে
সমন্বয় আনতেই হবে। এ শহরকে জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে হলে এ ছাড়া কোনো গতি নেই।
তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত