ছবি: অনলাইন থেকে সংগৃহীত
টানা নয় দিন অবরোধের পর এবার উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে
বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। হাসপাতালের ভেতরেই শুধু নয়, চারপাশে অন্যান্য
স্থাপনায়ও চালিয়েছে বুলডোজার-তাণ্ডব। জীবন্ত পিষে ফেলছে আহত ফিলিস্তিনিদের! জেনেভা-
ভিত্তিক ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর গণমাধ্যম ও মেডিকেল ক্রুদের কাছ থেকে পাওয়া
সাক্ষ্যের বরাত দিয়ে শনিবারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের
বরাতে রোববার একই খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা আলজাজিরাও। জানিয়েছে, হাসপাতালের
আঙিনায় তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা বুলডোজারের নিচে চাপা পড়ে কমপক্ষে ২০ জন
নিহত হয়েছেন। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটর শুক্রবার জারি করা এক বিবৃতিতে ইসরাইল প্রায় ২৫ হাজার
ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে অনুমান করেছে। যার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার শিশু।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালে হামলার ব্যাপারে ইউরো-মেড মনিটর জানায়, শনিবার সকালে
হাসপাতালটিতে ঢুকে এর দক্ষিণ অংশ সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয় ইসরাইল। প্রতিটি বালুর স্তূপের
ভেতর থেকে অন্তত একটি করে মৃতদেহ দেখা যাচ্ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হাসপাতালে
হামলার সময় ইসরাইলি বাহিনী হাসপাতালের বাইরের গেট, প্রশাসনিক ভবনের অংশ ও ফার্মেসি
ধ্বংস করে দেয়। এ সময় একটি ওষুধের দোকানে আগুন দেয় তারা। এদিন হাসপাতালের পানির
কূপ, বিদ্যুৎ জেনারেটর ও অক্সিজেন স্টেশন ধ্বংস করেছে ইসরাইলি সেনারা। এছাড়া ইসরাইলের
হামলায় হাসপাতালের প্রাঙ্গণে বড় গর্ত তৈরি হয়ে এর আগে এখানে কবর দেওয়া ২৬ জন
ফিলিস্তিনির মৃতদেহ মাটির ওপরে উঠে আসে। ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ উত্তোলনের মাধ্যমে ইসরাইল
মৃতদের মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করছে ইউরো-মেড মনিটর।
হামলার আগে কামাল আদওয়ান হাসপাতাল নয় দিনব্যাপী ঘেরাও করে রেখেছিল ইসরাইলি
ট্যাংক। আশপাশের ভবনগুলোও দখল করে রেখেছিল স্নাইপার সেনারা। গত ১১ ডিসেম্বর ইসরাইলি
সেনাবাহিনী হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে সরাসরি বোমা হামলা চালায়। সেদিনের হামলায় নিহত
হয়েছিলেন দুই নারী ও দুই শিশু। আরেকজন নারীর পা কেটে ফেলেছিল সেনারা। পরের দিন
(মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর) ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই হাসপাতালের পরিচালক ডা. আহমেদ আল-
কাহলোটকে গ্রেফতার করে। একই সঙ্গে ৭০ জনেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর
করে দেয়। গত বৃহস্পতিবারও ইসরাইলি নৃশংসতার খবর জানিয়েছে ইউরো-মেড মনিটর।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজার বেশ কয়েকটি কবরস্থানকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে বলে জানিয়েছে
তারা। কবরস্থানগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোসহ তা ভাঙচুর ও মৃতদেহ চুরির খবরও
জানিয়েছে তারা।
ইউরো-মেড মনিটর ফিল্ড ডকুমেন্টেশন অনুযায়ী, গাজার বেশ কয়েকটি কবরস্থানকে লক্ষ্যবস্তু
করা হয়েছে। যার মধ্যে আছে উত্তর গাজার আল-ফালুজা কবরস্থান, আলি বিন মারওয়ান, শেখ
রাদওয়ান, আল-শুহাদা ও শেখ শাবান কবরস্থান। এছাড়া গাজা সিটির সেন্ট পোরফিরিয়াস চার্চ
কবরস্থান ও উত্তরের শহর বেইত লাহিয়ার আল-শুহাদা কবরস্থান ছাড়াও আরও কয়েক ডজন
কবরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। কবরস্থানগুলোতে ঘনঘন হামলার কারণে এর ভেতরে বড় গর্তও
তৈরি হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ। এছাড়া কবরস্থান খুঁড়ে
ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ চুরির তথ্যও দিয়েছে ইউরো-মেড মনিটর।
গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ফিলিস্তিনিদের
অ্যাডভোকেসি গ্রুপের জন্য মেডিকেল এইডের পরিচালক রোহান তালবট। ইসরাইল
পদ্ধতিগতভাবে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইসরাইলি হামলায় গাজায় বসবাসকারী অন্যান্য দেশের নাগরিক নিহত হচ্ছেন। শনিবার ফ্রান্সের
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে ইসরাইলি হামলায়
আহত হয়ে তাদের একজন কর্মী মারা গেছেন। সে সময় ওই ব্যক্তি অন্য দুই সহকর্মী ও তাদের
পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে ফরাসি দূতাবাস থেকে বের হয়ে তার এক সহকর্মীর
বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছিলেন। এদিকে গাজায় বেসামরিক হত্যা বৃদ্ধিতে ইসরাইলের প্রতি বিশ্বসমর্থন
দিন দিন কমে যাচ্ছে। যৌথভাবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন ও জার্মান
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক গাজায় ‘টেকসই যুদ্ধবিরতি’র জন্য যৌথ আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার সানডে টাইমসে প্রকাশিত একটি অপ-এড-এ, ক্যামেরন এবং বেয়ারবক বলেন, ‘গাজায়
অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এখনো পর্যন্ত যুদ্ধ চলতে পারে না। আমাদের লক্ষ্য শুধু
কয়েক দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি নয়। এটা দিন, বছর ও প্রজন্মব্যাপী স্থায়ী শান্তি হতে হবে। আমরা
টেকসই যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করি।’ একইভাবে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনাও
রোববার গাজা যুদ্ধে ‘অবিলম্বে টেকসই যুদ্ধবিরতি’র আহ্বান জানিয়েছেন।
তথ্যসূত্র: অনলাইন থেকে সংগ্রহীত